জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালের হত্যা মামলায় বিতর্কিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াস শনিবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিন তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান। আসামিপক্ষে আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ২৪ আগস্ট রাতে সিআইডির একটি দল বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফরাজানা হক।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানাধীন পাকা রাস্তার ওপর আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটায় আসামিদের ছোড়া গুলি আসাদুলের বুকে ও ডান পাশে লাগে। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন বাবুর বাবা জয়নাল আবেদীন। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। তৌহিদ আফ্রিদিকে করা হয় ১১ নম্বর এবং তার বাবা নাসির উদ্দিন সাথীকে করা হয় ২২ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।
এর আগে ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে আফ্রিদির বাবা নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন এ মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এদিকে তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেপ্তারের পর তার হাতে নির্যাতনের শিকার অনেকে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তাদের ভাষ্যে, আফ্রিদি নারী কেলেঙ্কারি, মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন। আর সেসব অপরাধ বীরদর্পে চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি আশ্রয়-উৎসাহ পেতেন ‘ভাতের হোটেল’ খ্যাত ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান (ডিবি) হারুন-অর-রশিদের। তাকে ‘চাচা’ও ডাকতেন তৌহিদ আফ্রিদি। আর ‘কমিশন’ পাওয়ার কারণে হারুনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের পেছনে ছিলেন পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র মতে, কামালের যোগসাজশে তৌহিদ আফ্রিদি ও ডিবির হারুন একটি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চক্র গড়ে তুলেছিলেন। তাদের টার্গেট ছিলেন শিল্পপতি বা ব্যবসায়ীরা। কোনো অপরাধ সংঘটিত করে টার্গেটকৃত শিল্পপতি বা ব্যবসায়ীদের নাম জড়িয়ে দিয়ে তা মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিত এ চক্র। এরপর সেই ফাঁদে আটকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিত তারা।
তৌহিদ আফ্রিদির ফাঁস হওয়া কলরেকর্ড থেকে জানা যাচ্ছে, মুনিয়ার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এছাড়া এক নারী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে আফ্রিদি তাকে হুমকি দিয়ে বলেছে, ‘মুনিয়ার মতোই তোর অবস্থা হবে। ’ এ বিষয়টিকে সবাই মুনিয়ার মৃত্যু রহস্য উন্মোচনের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে মনে করছে। আর মুনিয়ার মৃত্যুর পেছনে আফ্রিদির জড়িত থাকার ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠছে।










