রানা প্লাজার সেই ভয়াবহ স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি সাংবাদিক নাজমুল হুদা
নিজস্ব প্রতিবেদক:-
আজ রানা প্লাজা ট্রাজেডির সেই ভয়াবহ দিন। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ডের সাথেই অবস্থিত বাংলাদেশের ইতিহাসের বিভীষিকাময় এক ভবন রানা প্লাজার ধস। প্রাণ হারায় ১১৩৮ জন এবং দুই হাজারের বেশি শ্রমজীবী মানুষ মারাত্মক আহত হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই আজ পঙ্গু কিংবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সেদিনের সেই দুঃসহ স্রৃতি আজও ভুলতে পারেন না বেঁচে থাকা হতভাগ্য শ্রমিকেরা। চোখ বুজলেই চোখের সামনে ভেসে আসে রানা প্লাজা ধসের সেই ভয়ংকর শব্দ। কিছুতেই ঘুম আসে না তাদের। অথচ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও নিষ্পত্তি হয়নি রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডের সেই বিচার। ভবনটির স্বত্বাধিকারী খুনি রানা এখন কারাগারে আটক। চেষ্টা চালাচ্ছে বের হয়ে আসার জন্য। কিন্তু আহত শ্রমিকেরা সেই দুঃসহ স্মৃতি থেকে নিজেকে বের করতে পারেননি আজও। কিংবা দারিদ্র্যের চরম কষাঘাতে আজও তারা সুখের মুখ দেখেননি। সেদিন যারা নিহত হয়েছিল তাদের অধিকাংশই ছিল নারী শ্রমিক। পরিবারের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দেয়ার জন্যই খুব সকালে তারা সেদিন রানা প্লাজায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যায়। অবশ্য তার আগের দিন রানা প্লাজা ভবন ফাটলের দৃশ্য তাদের চোখে ধরা পড়ে।। সেদিনের সেই ভয়াবহ স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি সাভারের একজন অকুতোভয় সাংবাদিক নাজমুল হুদা। আজকে যিনি সাভার প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি।
ভবন ধসের আগের দিন তিনি কোন এক মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে ছুটে গিয়েছিলেন সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতির চিত্র তুলে আনতে।সেদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভবনের কিছু ফাটলের ছবি তুলে তার কর্মরত প্রতিষ্ঠান একুশে টিভিতে প্রচার করেছিলেন তিনি। অবশ্য তিনি যখন রানা প্লাজা ফাটলের সংবাদ সংগ্রহ করতে যান তখন তাকে অনেক হুমকি ধামকির সম্মুখীন হতে হয়। সবকিছুকে উপেক্ষা করে তিনি এই সংবাদটি প্রচার করেছিলেন।
যদি কর্তৃপক্ষ আগের দিনের এই নিউজটিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করত, তাহলে হয়ত পরদিন সকালে হাজারের অধিক মানুষের লাশ দেখতে হতো না। সাংবাদিক নাজমুল হুদা বলেন, শ্রমিকরা কি মানুষ না? তাদের জীবনের কি মূল্য নেই? সেদিন ফাটলের অস্তিত্ব টের পেয়ে কর্তৃপক্ষ কেন কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করেননি, সেই প্রশ্ন আজও খুঁজে বেড়ান তিনি। ঘটনার আগের দিনের ফাটলকে গুরুত্ব না দেয়ার কারণে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল যা ঘটার ঘটে গেল। ঐদিন ধ্বংস হল রানা প্লাজা। চিরতরে মৃত্যুবরণ করল হাজারেরও অধিক পোশাক শ্রমিক। আজ সরেজমিনে প্রতিবেদন করতে গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, পেশাজীবী ছাত্র জনতা সহ অসংখ্য সংগঠন রানা প্লাজায় অবস্থিত বেদীতে ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছেন। উপস্থিত হয়েছেন সেদিনকার সেই ঘটনায় আহত অনেক শ্রমিক। উপস্থিত হয়েছেন, নিহত আহত শ্রমিকদের আত্মীয়-স্বজনেরা। তাদের একটাই প্রশ্ন কবে শেষ হবে রানা প্লাজা মামলার নিষ্পত্তি। কবে হবে খুনি রানার ফাঁসি?
Leave a Reply