রাজিব মাহমুদ ( বিশেষ প্রতিনিধি)- ১৫০ বছরের পুরোনো গ্রাম ভাকুর্তা । এ গ্রামের প্রতিটি ঘরের উঠোন, দরজা, ঘরের ভিতরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অলঙ্কার তৈরির সরঞ্জাম। বেশিরভাগ বাড়ির বারান্দায় উজ্জ্বল আলোয় উঁকি দিচ্ছে আগুনের ফুলকি। পুরো গ্রামেই চলছে এ কর্মযজ্ঞ। শত বছরের ঐতিহ্য পিতৃপুরুষের পেশাকে আগলে রাখা একটি জনপদ ভাকুর্তা। তাদের জীবনের চিত্রটা সুখকর না হলেও তারা এই পেশা আগলে রেখেছেন জীবিকা ও পিতৃপুরুষের টানে।
এই ব্যবসা প্রাচীন সময় থেকে চলে আসছে। এই গ্রামের ছেলে বুড়ো প্রায় সবাই গহনা বানানোর কাজ করে। প্রায় ১০ হাজার নারী-পুরুষ গয়না বানানো এই কাজের সাথে যুক্ত। একটা সময় ভালো ইনকামের উৎস ছিল এই ব্যবসা। কিন্তু কারিগরদের আক্ষেপ কারণ ভারত থেকে চোরাই পথে আসা কম মান এবং কম দামের পণ্যের কারণে তাদের চাহিদা কমে যাচ্ছে।
কিন্তু তাদের হাতে বানানো গুলোই ঐতিহ্যবাহী গহনা। রুপা, তামা, কাসা এবং পিতল ইত্যাদিই হলও এই গহনার মূল উপাদান। গয়না গুলো বানানোর পরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দোকানী বা ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়। ঢাকার নিউমার্কেট, আজিজ সুপার, চাঁদনী চকসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় সব বড় শপিং মলের গয়না আসে এই গ্রাম থেকে। মার্কেটগুলোতে সিটি গোল্ড বা অ্যান্টিক নামে এসব গয়না বিক্রি হয়। ডিজাইন এবং উপাদান ভেদে দাম কম বেশি হয়ে থাকে। এখান থেকে যেমন গহনা কেনা যায় তেমনি চাইলে নিজেদের ডিজাইন দিয়েও বানিয়ে নেয়াও যায়।
মূলত উৎসব ও বিশেষ কোনো দিবস কেন্দ্র করে এর চাহিদা বেড়ে যায়। জানা যায়, ’৮০-এর দশকে এই বাজারে শুধুই সোনা ও রুপার গয়না তৈরি হতো। কিন্তু কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও উপযুক্ত মজুরি না পাওয়াসহ নানা কারণে ’৯০-এর দশকের পর থেকে কারিগররা সোনা ও রুপার অলঙ্কার তৈরি থেকে সরে আসেন। এখন বেশির ভাগ কারিগর ঝুঁকে পড়েছেন ইমিটেশনের গয়না তৈরির দিকে। তামার ব্যবহার বেশি হলেও পিতল ও দস্তা দিয়েও গয়না তৈরি করেন এই কারিগররা।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঠুক ঠাক শব্দে নানা ধরনের গয়না তৈরিই তাদের পেশা। এই জনপদকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে গয়নাশিল্প। এ কাজে এত মানুষ যুক্ত হওয়ার কারণ রোদ-বৃষ্টি-বাদলের মধ্যেও কাজ চলে সমান তালে। বাড়ির বউ-ঝিয়েরাও গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে করতে পারেন এ কাজ। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে যুক্ত হয় শিক্ষার্থীরা। অপরিসীম ধৈর্যের সঙ্গে একটার সঙ্গে আরেকটার সংযোগ ঘটিয়ে তা নান্দনিক গয়নায় রূপ দেন তারা।
Leave a Reply