মুফিজুর স্বপনের তিনটি কবিতা।
১।
নাগরিক বিপননে ডুবে মুছে দিছি
আস্তরণে লেগে থাকা জলের প্রলেপ
জেলে ডিঙি মূলে ও সংশ্লেষে অমোঘ জীবন,
অথচ অন্তর্বাস জানে ভিতরের ধুন্ধুমার ডুবোজল
বিষাদের দুপুর পেরিয়ে প্রায়ান্ধ সাহাহ্নে
আড়ালে ফিরে আসে মায়ের বিস্মৃতপ্রায় মুখ।
তবু প্রক্ষেপণে আমরা বেঁচে আছি।
জমির ঢালু অংশের ভৌগলিক সুবিধা নিয়ে
আগাম বেড়ে উঠা শষ্যের মতো
কামে ও সম্ভোগে ফসলের মমতায়।
২।
কুসুমের তীব্র সুষমায় গতকালও বেঁচেছিলো
কোমল স্নিগ্ধতা আজ! ক্ষমতার শোষণে বিবর্ণ,
কারা যেন চুরি নিছে-বিশ্বাস নিমগ্ন মাদকতা!
পালকাবৃত প্রসব ব্যথা নিয়ে
মুখ-আগলা করিনি কস্মিনকালে
তবু যদি বোমারু বিমান
বুকের মাটি নিশানা করে
আমি কী শরীরে শয্যা পেতে দেবো, নিসংশয়ে?
আদালত, উদয়াস্তে তুমি’ই তো সাক্ষ্য দিলে
মৃত্যুর মতো নিরেট সত্যবাদী হতে,
৩।
আমাদের বিদ্যুতের কানেকশন ছিলোনা
খুব বেশি কেরোসিন ও থাকতোনা ঘরে
হারিকেনের সলতে বসে যেতে-যেতে, অন্ধকারে,
পিতার ক্লান্ত মুখ দেখে বিশ্বাস করেছি
আমি কোনো রাজপুত্র নই – তবু গভীরতম ঘুমের কাতরতায়
জোর করে জেগে রয়ে, মার মুখে শোনা রূপকথার গল্পে
দিগ্বিজয়ী রাজপুত্র অথবা দুঃখিনী রাজকন্যার বা’ইরে
নিজেকে নিয়ে ভাবার মতো তৃতীয় কোনো চরিত্র ছিলোনা।
তাই ভিতরের শুপ্ত বহ্নি শিখার আড়ালে
ঠান্ডামতো কেরোসিনের আঁচ স্পর্শ করে
চিরদিন ভেবে এসেছি হয়তোবা এটাই জীবন!
সেই জীবন আজ মাংশভূক শকুনের ফেলে দেয়া হাড়ের মতো আমাকে ফেলে দিছে, গহীনে ফেলে দিছে!
শববাহীর যন্ত্রনা তুমি বুঝবেনা, নিথর দেহটা যখন
মাটির নিচে রেখে আসি কেবলি মনে হয়
এখন ও রয়ে গেছে তার শরীরের ঘ্রাণ, অমেয় জীবনতৃষা
তবু সে হারায়ে গেছে, অন্ধকারে হারায়ে গেছে।
এই সর্বাঙ্গীণ অন্ধকার হতে আমি উঠে আসতে চাই
পাকখাওয়া ঢেউয়ের মতো শততো প্রস্তাবে উঠে আসে চাই,
আমাকে পরিত্রাণ দাও
গভীর রাতে যে মশা তোমাকে জ্বালিয়ে মারে
তাকে পিষে মারতে-মারতে মনে করো
আমার ওষ্ঠাগত নিশ্বাস এখন তোমার হাতের মুঠোয়।
Leave a Reply