বৃহস্পতিবার | ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ | ২৮ কার্তিক, ১৪৩২ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭

ঋণের দায়ে চারজনের আত্মহত্যা'

ঋণ নিয়ে ১২০০ জনের জন্য চল্লিশা

জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’ চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছিলেন মিনারুল ইসলাম। আত্মহননের আগে তিনি হত্যা করেছিলেন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে। মিনারুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী–সন্তানদের চল্লিশা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিনারুলের বাবা জানিয়েছেন, এই আয়োজন করতে তাঁকে ঋণ নিতে হয়েছে, যার জন্য জমি বিক্রি করতে হবে।

মিনারুল ইসলাম (৩৫) রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে। গতকাল শনিবার তাঁদের বাড়িতে ওই চল্লিশার আয়োজন করা হয়।

গত ১৫ আগস্ট নিজ বাড়ি থেকে মিনারুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী মনিরা খাতুন (৩০), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলার (৩) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মাহিন খড়খড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। আর মিনারুল কৃষিকাজ করতেন। লাশের পাশে চিরকুট পাওয়া যায়, যাতে মিনারুল স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। ওই চিরকুটে মিনারুল আরও লেখেন, ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম, সেই ভালো হলো। কারও কাছে কিছু চাইতে হবে না।’

গতকাল শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বামনশিকড় গ্রামে চল্লিশার আয়োজন করা হয়। শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানে চড়ে আসছেন আত্মীয়স্বজনেরা। দাওয়াত পেয়েছেন গ্রামের মানুষও। রুস্তম আলীর বাড়ির সামনে ও পেছনে দুটি প্যান্ডেল করা হয়েছে। ভাতের সঙ্গে ছিল ডাল ও মুড়িঘণ্ট। রুস্তম আলী ঘুরে ঘুরে আমন্ত্রিত অতিথিদের খাওয়ার তদারক করছেন।

রুস্তম আলী বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানকে কেউ চল্লিশা বলে। কেউ বলে ফয়তা। সমাজের মানুষকে নিয়ে এটা করতে হয়। বাপ-দাদার আমল থেকেই এটা দেখে আসছি। আমিও মনের আবেগে করলাম। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী করে। আমি গরিব মানুষ, মাংস করতে পারিনি। মাছ দিয়ে মুড়িঘণ্ট আর ডাল করেছি।’

রুস্তম আলী আরও বলেন, ‘আশপাশের মানুষজন বলছিল, চারজনের মরার কারণে বাড়ি ভারী ভারী লাগছে। ছোট ছিলেপিলেরা ভয় পাচ্ছিল। অনুষ্ঠানটা করলাম যাতে ভয় ভাঙে। বাড়ি যেন পাতলা হয়। দুপুরে দোয়া হয়েছে। তারপর খাওয়াদাওয়া। প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হলো। আত্মীয়স্বজন ও সমাজের মিলিয়ে ১ হাজার ২০০ মানুষের আয়োজন করা হয়েছিল।’

টাকা জোগাড় হলো কীভাবে, জানতে চাইলে রুস্তম আলী বললেন, ‘সবই ধারদেনা। আমার তো জমানো টাকা নেই।’ শোধ করবেন কীভাবে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘১৫-১৬ কাঠা জমি আছে। এক কাঠা বেচব, বেচে ধার শোধ করব। তা ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আলী বলেন, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে এটা নেই। কিন্তু কেউ মারা গেলে এটা করতে হয়। এটা আমাদের এলাকার রেওয়াজ।’

 

আপনার মন্তব্য

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

অনুসরন করুন

সর্বশেষ খবর

আর্কাইভ

  • Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
     12
    3456789
    10111213141516
    17181920212223
    24252627282930