বৃহস্পতিবার | ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ | ২৮ কার্তিক, ১৪৩২ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭

‘আল্লাহ, তুই দেহিস’

জোর করে চুল-দাড়ি কেটে দেওয়ার ঘটনায় মামলা

জেলা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় জোর করে বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন আকন্দের (৭০) চুল ও দাড়ি কেটে দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় ‘হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ’ নামক সংগঠনের কয়েকজন সদস্য ও স্থানীয় কয়েকজন সহযোগীকে আসামি করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীর ছেলে শহীদ আকন্দ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাদী হয়ে তারাকান্দা থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টিপু সুলতান জানান, ঘটনাটি প্রায় চার মাস আগের হলেও ভিডিওটি সম্প্রতি ভাইরাল হয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি করেছে। এরপর ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের মামলা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

শনিবার ভুক্তভোগী হালিম উদ্দিন আকন্দও বিচার চেয়ে থানায় হাজির হন। তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে মো. শহীদ আকন্দ, প্রতিবেশী নাতি আলীম উদ্দিন আকন্দ এবং ভাতিজা মো. ফারুক মিয়া।

হালিম উদ্দিন আকন্দ অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন তিনি বাজারে গেলে কয়েকজন তাকে জোর করে ধরে চুল ও দাড়ি কেটে দেন। তখন বাজারে লোকজন কম ছিল। চেষ্টা করেও তিনি তাদের হাত থেকে রেহাই পাননি।

তিনি বলেন, তখন আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি, এখনও আল্লাহর কাছেই বিচার চাই। তবে পরিবারের কথায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি, দেখি কী বিচার হয়।

তিনি আরও জানান, তার চুল-দাড়ি কাটার সময় বাইরের দুজনসহ আট-নয়জন ছিলেন। তাদের মধ্যে এলাকার নয়ন ও মজনুও ছিলেন। তারা এখনও এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন এবং তাকে ভয় দেখাচ্ছেন। আমি তাদের বিচার চাই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হালিম উদ্দিনের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামে, যা ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের পাশে অবস্থিত। স্থানীয়রা তাকে ‘হালিম ফকির’ নামে চেনেন। তিনি একেবারেই দরিদ্র মানুষ। মানসিকভাবে সুস্থ এবং অপ্রকৃতিস্থ নন। হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ পরানের (র.) ভক্ত তিনি। প্রায় ৩৭ বছর আগে তাদের মাজারে যাওয়ার পর থেকেই তিনি চুল-দাড়ি কাটা বন্ধ করেন এবং ভিন্ন বেশভূষা ধারণ করেন। এরপর থেকে টুকটাক কবিরাজি কাজ করতেন এবং নিজের মতো জীবনযাপন করতেন। পরিবার বা এলাকার কারও সঙ্গেই তার কোনো সমস্যা ছিল না।

স্থানীয়রা আরও জানান, জোরপূর্বক চুল-দাড়ি কাটার পর থেকেই হালিম উদ্দিন বিষণ্নতায় ভুগছেন। ঘটনার কথা উঠলেই কখনও আবেগপ্রবণ, কখনও ক্ষুব্ধ, আবার কখনও হতাশ হয়ে পড়েন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক নিন্দার ঝড় ওঠে। বিশেষ করে ভিডিওতে হালিম উদ্দিনের অসহায়ের মতো বলা বাক্য ‘আল্লাহ, তুই দেহিস’ এখন প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে।

ময়মনসিংহ জেলা বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আসলাম বলেন, হালিম উদ্দিন কাদেরিয়া নকশা বন্দির অনুসারী। তাকে এভাবে হেনস্তা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যারা এমন করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

প্রতিবেশীরা জানান, হালিম উদ্দিন সংসার জীবনে ছেলে ও কন্যা সন্তানের জনক। একসময় কৃষক ছিলেন, পরে ধীরে ধীরে ফকিরি জীবনে প্রবেশ করেন। প্রায় ৩৭ বছর ধরে তার মাথায় জট বাঁধা ছিল। স্বাভাবিক মানুষের মতোই চলাফেরা করতেন, বাজারেও নিয়মিত যেতেন। গত কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে একদল লোক জোর করে তার মাথার জট, দাড়ি ও চুল কেটে দেয়। হালিম উদ্দিন প্রাণপণ প্রতিরোধ করলেও আগত ব্যক্তিদের শক্তির কাছে হার মানতে হয়।

আপনার মন্তব্য

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

অনুসরন করুন

সর্বশেষ খবর

আর্কাইভ

  • Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
     12
    3456789
    10111213141516
    17181920212223
    24252627282930