বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক ছাত্র হত্যাসহ অন্তত নয়টি মামলার আসামি বহুল আলোচিত আইয়ূব আলী সিকদার ওরফে ‘কিলার শিকদার’-কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে তাকে হত্যা মামলায় কারাগারে না পাঠিয়ে এক চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।আইয়ুব গ্রেপ্তারের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ফিরলেও পুলিশের পদক্ষেপে হতাশা প্রকাশ করেছেন এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষজন।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আদালতের জিআর শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়া থানা পুলিশ রিমান্ড আবেদন ছাড়াই তাঁকে আদালতে পাঠিয়েছে এবং ফরওয়ার্ডিং প্রতিবেদনে মূল মামলার তথ্য গোপন রাখা হয়।
এর আগে সোমবার পাঠালে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাজুল ইসলাম সোহাগের আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সূত্র জানায়, আশুলিয়ার ‘ডন’ নামে পরিচিত আইয়ূব আলী সিকদার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্থানীয়ভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। দলীয় প্রভাব ব্যবহার করে তিনি পান জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির পদ। ওই সময় আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি দখল, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িত থাকলেও, রাজনৈতিক আশ্রয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ছিলেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় বাড্ডা থানার ছাত্র হত্যা মামলার অন্যতম আসামিও তিনি।
গত ৫ আগস্টের পর থেকেই আত্মগোপনে থাকা আইয়ূব সম্প্রতি এলাকায় ফিরে এসে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন কাজে অংশ নেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
গত রবিবার বিকেলে আশুলিয়া থানা পুলিশ আউকপাড়া এলাকা থেকে আইয়ূব আলী শকদারকে গ্রেপ্তার করে। তবে মামলার নথিতে দেখা যায়, তাঁর স্থায়ী ঠিকানা মুন্সিগঞ্জ, তেজগাঁও ও আশুলিয়ায় রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তাঁকে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তবে স্থানীয় সূত্র দাবি করে, আইয়ূবকে গ্রেপ্তারের পর বিএনপির এক শীর্ষ নেতার তদবিরে ছাত্র হত্যা মামলার বদলে চাঁদাবাজি মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আইয়ূব আলী একসময় ময়লার ভাগাড়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পরে তেজগাঁওয়ের মিল্ক ভিটা কারখানায় চাকরি নেন। পরবর্তীতে ‘ন্যাশনাল প্লাজা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে সংগঠন গড়ে সরকারি জমি দখল ও জালিয়াতির মাধ্যমে হস্তান্তর শুরু করেন। ভূমি সংস্কার বোর্ডের প্রতিবেদনে তাঁর এসব কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়।
আশুলিয়ার আউকপাড়ায় প্রায় ২০ একর সরকারি সম্পত্তি দখল করে তা প্লট আকারে বিক্রি করে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
তদন্তে দেখা গেছে, বাড্ডা থানায় ছাত্র হত্যা মামলা, নিউ মার্কেট থানায় চাঁদাবাজি মামলা এবং আশুলিয়া থানায় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টাসহ অন্তত নয়টি মামলা রয়েছে আইয়ূব আলী সিকদারের বিরুদ্ধে।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আইয়ূব আলী সিকদারকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।’
এ ব্যপারে আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। যে মামলায় দ্রুত ও পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেই মামলায় তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।’
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাতুল ইসলাম বলেন, ‘আইয়ূব আলী সিকদার চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে ছাত্র হত্যা মামলার আসামিকে শুধু চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়টি মুখরোচক গল্প মাত্র।’
তিনি আরও জানান, ‘তাঁর রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডে পেলে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য জানা যাবে।’










